শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ, ১৪৩১
মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি (পটুয়াখালী)।।
ইলিশের প্রজনন মৌসুমে প্রান্তিক জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনা মূল্যে বকনা বাছুর বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আর এসব বকনা বাছুর পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে জেলেদের নিকট থেকে বিপুল অংকের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। কেউ কেউ ঘুষ দিয়েও বকনা বাছুর পাননি। পরে ঘুষের টাকা ফেরৎ পেতে আদালতে একাধিক মামলা করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা।
মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি মো. আশ্রাব আলী আকন (৫৩) ও মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের মৎস্যজীবি মো. মেহেদী হাসান জুয়েল মির্জাগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে আসামী করা হয় উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন খানকে।
মামলার এজাহার থেকে জানাযায়, ইলিশের প্রজনন, বেড়ে ওঠা ও উৎপাদন বাড়াতে নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প এর আওতায় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকার বিনা মূল্যের বকনা বাছুর বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। মির্জাগঞ্জ উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন খান (চলতি দায়িত্ব) হত দরিদ্র জেলেদের এসব বকনা বাছুর পাইয়ে দেয়ার নামে সরকারি তহবিলে অর্থ জমা দেয়ার নাম করে উপজেলার শতাধিক জেলেদের নিকট থেকে ৬-১০ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
ভুক্তভোগীদের জেলেরা জানান, উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন খান নিজের খেয়াল খুশি মতো জেলেদের তালিকা প্রস্তুত করে প্রতিটি বকনা বাছুরের অনুকূলে সরকারি তহবিলে টাকা জমা দেয়ার কথা বলে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। সবশেষ বাছুরগুলো জেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের সময় অফিস খরচের নামেও বাছুর প্রতি নেয়া হয় দুই হাজার টাকা করে।
পরবর্তীতে জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণের আশ্বাস দিয়ে উপজেলার কয়েকশত জেলে পরিবারের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় তার ( উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে। বকনা বাছুর না পেয়ে ঘুষের টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য মৎস্য কর্মকর্তার কাযার্লয়ের সামনে প্রতিদিন ধরনা ধরেও ফল পাননি। পরে ঘুষের টাকা ফেরৎ চেয়ে ১১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ উপজেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি মো. আশ্রাব আলী আকন ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি মো. মেহেদী হাসান জুয়েল বাদী হয়ে উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন খানকে আসামী করে মির্জাগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি মো. আশ্রাব আলী আকন বলেন, ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি প্রণোদনা হিসেবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের বকনা বাছুর বিতরণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে সহজ সরল জেলেদের নিকট থেকে ছয় হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা। প্রথম দফায় জেলেদের মধ্যে কেউ কেউ বকনা বাছুর পেয়েছেন। বাকীদের পরবর্তীতে দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়ে আসছেন কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তিনি বকনা বাছুর দিচ্ছেন না বলে টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে তিনি টালবাহানা করেছেন। বাধ্য হয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি।
মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি মো. মেহেদী হাসান জুয়েল হাওলাদার বলেন, মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের মনোহরখালী গ্রামে বকনা বাছুর দিবেন বলে ২২ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মাত্র ২টি বকনা বাছুর দিয়েছেন। বকনা বাছুর পাওয়ার আশায় জেলেদের কাছ থেকে টাকা তুলে তাঁকে দিয়েছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোসলেম উদ্দিন খান বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব মামলা করা হয়েছে।‘প্রকল্পের নিয়ম ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে যারা প্রকৃত জেলে তাঁদেরকেই বকনা বাছুর দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রণোদনা হিসেবে ১৫,৪০,০০০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তা দিয়ে ৫৫টি বকনা বাছুর ক্রয় করে বিতরণ করা হয়েছে। এ বছর ৮০জন জেলের তালিকা করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে পরবর্তীতে জেলেদের মধ্যে বকনাবাছুর বিতরণ করা হবে।